তিলোত্তমা
- Salil Bhaduri
- Nov 13, 2018
- 2 min read
তিলোত্তমা,
তুমি ভালো আছো তো?
তোমার বুক চিরে কাতর আর্তনাদে,
চকিতে বেজে ওঠে অসুখের সাইরেন।
সে যে বেজেই চলে একটানা।
কেমন যেন নির্দয়,মদমত্ত হুঙ্কারে
ভয় ধরিয়ে যায়।
ভাল থাকার আনন্দটা
শুষে নেয় এক লহমায়।
তিলোত্তমা,
তুমি ভাল আছে তো?
আ্যম্বুলেন্সের সদম্ভ বিচরণে,
অন্তর হতে মুহুর্মুহু নিঃসৃত,
নিষ্করুণ শব্দের চিৎকারে
মনে শঙ্কা জাগে-
তিলোত্তমার অসুস্থতা বাড়লো নাকি?
কত শত বোঝার নিশ্চিন্ত আশ্রয়।
তবু ক্লান্ত তো দেখিনি তোমায়।
বাইরের চাকচিক্যের অন্তরালে
কেন এ ছন্নছাড়া রূপ?
তিলোত্তমা,
তুমি কি সত্যিই ভাল নেই?
অসুখের দুঃস্বপ্ন তো অসুখ বাড়ায়নি।
তবে কি ব্যাধি-ব্যাধি খেলা
নয়তো অজানা কোন ভয়
মনের অন্তপুরে বাসা বেঁধে
কাবু করেছে তোমায় ?
তাই কি হাতছানি দেয় হাসপাতাল,
ঠান্ডাঘরে সাজিয়ে রেখে দুর্মূল্য শয্যা?
তোমায় ভাল করার তাগিদে
বিপুল উপকরণে সজ্জিত চিকিৎসা বিপণি।
অবাধ নিদানে, জটিল ব্যাধির জালে
কত শত অসহায় বন্দী!
গিনিপিগের মত কাঁটাছেঁড়া আর
বস্তা বস্তা ওসুধের পাহাড়ে
চাপা পড়ে বাঁচার তাড়না।
সুস্থ হবার মূল্য
তো চোকাতেই হবে।
চিকিৎসা এখন পণ্য বলেই কি
উন্মত্ত বিপণনের
এ এক নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ?
তাইতো বার বার মনে হয়
তিলোত্তমা,মহানগরী,
তুমি সত্যিই কি ভাল আছো?
তোমার দারিদ্র্য
যেথায় ব্যর্থ প্রবেশে,
পায় না সুস্থ হবার অধিকার,
বিত্তের অহংকারে সেথায়
চিকিৎসা বিলাস!
সেতুর নীচে কিংবা
ফ্লাইওভারের এক ফালি
অনিশ্চিত আশ্রয়ে
উন্মুক্ত শয্যায়
কত মানুষের কোন মতে
আব্রু রক্ষা।
হাজার লোকের ভীড়ে
মিলে মিশে একাকার।
তিলোত্তমা,
তুমি কি পারবে
সকলকে জীবনের অধিকার দিতে?
যদি না পারো,
তোমারও রেহাই নেই।
যে রোগের বীজ
অতি স্নেহে পালিত তোমার বুকে,
কোন একদিন ছোবল মারবে তোমায়
ভয়ঙ্কর কোন রূপে।
তিলোত্তমা, তাই
নির্মম পরিহাসে,
একদিন সত্যিই আসে।
তোমার ক্ষয়িষ্ণু শরীর
আত্মসমর্পন করে
বিফল মনোরথে।
তিলোত্তমা,আজ
তুমি নাকি ভীষণ অসুস্থ?
ICCU তে শায়িত নিস্পন্দ শরীরে।
বন্ধ এসি ঘরের ছোট্ট কাঁচের খুপরী দিয়ে
চোখ মেলে তাই তো মনে হল।
ICCU না ICUC?
এ যে I see You see চুক্তি!
দিবে আর নিবে,
মিলেমিশে খাবে।
বাকি সব চুলোয় যাক।
কি এসে যায়?
কি জানি!
তোমার অসাড় শরীরটায় প্রাণ আছে তো?
নাকি কোন ইনজেকসনে নির্জীব?
অজানা আশঙ্কায় অপেক্ষায় থাকা।
বোঝার কোন উপায় নেই।
তিনদিন পার করে
তবেই মিলবে আশ্বাস,
বাঁচার লড়াইয়ে রোগী জিতবে কি না।
ততদিন ওষুধের পাহাড়
ভাঙ্গে অচেতন দেহে।
নিথর শরীরটা পড়ে থাকে।
বেহিসাবের বিলে
ঘাড় নুয়ে পড়ে।
শেষের সে দিন আসে অবশেষে।
বজ্রসম শেল বেঁধে অবসন্ন দেহে।
কাঁচের খুপরী বলে, শয্যায় কেউ নেই।
জানা গেল না,
শয্যায় শায়িত তিনদিন
সে মৃত না মৃতপ্রায়।
মৃতের এ চিকিৎসা বিধান
শুধু ব্যবসার প্রয়োজনে?
কে দেবে উত্তর তার?
তিলোত্তমা,
এখন তুমি শুধুই খবর!
মানুষের প্রাণ এখন দুর্বৃত্তের হাতে?
দয়াহীন,অর্থলোলুপ,
নৃশংসের পরিহাসে।
Comments